Slide Left Slide Right
News Image
News Image
News Image
সংস্কৃতি

Published :

<span class="center">সাইফের ওপর হামলাকারী </span> <span class="center">ব্যক্তি কি আদৌ বাংলাদেশি?</span>

ভারতের মুম্বাইতে বলিউড তারকা সাইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানোর ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করেছে, সেই ব্যক্তি বাংলাদেশি নাগরিক কি-না তা নিয়েই এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। রবিবার ভোরে মুম্বাইয়ের কাছে থানের একটি গভীর ম্যানগ্রোভ জঙ্গলের ভেতর থেকে মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ নামে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সাংবাদিক সম্মেলন করে মুম্বাই পুলিশ ঘোষণা করে, ধৃত ব্যক্তি একজন 'অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী' বলেই তারা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে।

কিন্তু পরে তাকে আদালতে পেশ করা হলে যে দুজন আইনজীবী তার হয়ে সওয়াল করেছেন তারা দুজনেই দাবি করেছেন ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি নাগরিক এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

আইনজীবী সন্দীপ শেরখানে বলেছেন, "আমার ক্লায়েন্ট যে বাংলাদেশি নাগরিক, পুলিশ তার কোনো প্রমাণই দেখাতে পারেনি।" তিনি আরো দাবি করেন, শরিফুল ইসলাম বিগত বহু বছর ধরে মুম্বাইতে নিজের পরিবারের সঙ্গেই বসবাস করছেন। ফলে মাত্র কয়েক মাস আগেই তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছেন–এই বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

ধৃত শরিফুল ইসলামের অপর আইনজীবী দীনেশ প্রজাপতিও জানান, ওই ব্যক্তির কাছ থেকে এমন কোনও নথি পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি যার ভিত্তিতে তাকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা যায়।

ভারতের কোনো কোনো সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট করা হয়েছে, ধৃত ব্যক্তির কাছ থেকে বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলায় ইস্যু করা একটি 'বার্থ সার্টিফিকেট' বা জন্ম পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে– যার ভিত্তিতে সে আসলে ঝালকাঠির বাসিন্দা বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু যে কোনো কারণেই হোক, মুম্বাই পুলিশ সেই কথিত বার্থ সার্টিফিকেট এখনও প্রকাশ্যে আনেনি বা আদালতেও পেশ করেনি।

অথচ সাইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালানো ও তাকে ছুরিকাহত করার জন্য বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনার পাশাপাশি অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার দায়ে ইতিমধ্যেই শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্ট ও পাসপোর্ট অ্যাক্টে চার্জ আনা হয়েছে।

তবে মুম্বাইয়ের সাংবাদিকরা অনেকেই বলছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি সত্যি সাইফ আলি খানের বাড়িতে ঢুকে একা ওই দুঃসাহসিক হামলা চালিয়ে থাকে– তাহলে সে মাত্র কয়েক মাস আগে প্রথমবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে ঢুকেছে এটা বিশ্বাস করা বেশ কঠিন! ফলে ধৃত মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শেহজাদ সত্যিই বাংলাদেশি কি না, তা এখনও নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়।

অথচ ওই অভিযুক্ত হামলাকারীকে 'বাংলাদেশি' বলেই ভারতীয় মিডিয়াতে ঢালাওভাবে বর্ণনা করা হচ্ছে।

গত বেশ কয়েকমাস ধরেই ভারতের ছোটবড় মেট্রো শহরগুলোতে শুরু হয়েছে তথাকথিত 'বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা খেদাও' অভিযান–অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে বিশেষ করে বাংলাভাষী মুসলিমদের ধরে ধরে পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে 'ডিপোর্ট' করার জন্য তুলে দিচ্ছে। দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন বলেই বোধহয় দেশের রাজধানীতে এই অভিযান সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে, অবৈধ বাংলাদেশিদের ভারতীয় পরিচয়পত্র পাইয়ে দিতে সাহায্য করার অভিযোগে ক্ষমতাসীন দল আম আদমি পার্টির এক নেতা তথা বিধায়কের বিরুদ্ধে পুলিশি তদন্তও চলছে। তবে দিল্লি ছাড়াও মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, হায়দ্রাবাদ, জম্মু, জয়পুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই একই ধরনের ধরপাকড় শুরু হয়েছে।

মুম্বাইয়ের প্রবীণ সাংবাদিক হরিশ নাম্বিয়ার মনে করেন, এটা ভারতের বিভিন্ন অংশে বহু দিন ধরে চলে আসা 'বাংলাদেশবিরোধী' রাজনীতিরই একটা বহিঃপ্রকাশ, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক পালাবদলের পর যা ভারতে নতুন করে আবার দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলছিলেন, "এই যে ধরুন মুম্বাই পুলিশ ভাল করে যাচাই-বাছাই না করেই দুই ঘণ্টার মধ্যে বলে দিল ধৃত ব্যক্তি বাংলাদেশি, এটাও আসলে সেই রাজনীতিরই একটা ছায়া! আমি সত্যিই জানি না সে বাংলাদেশি কি না, আমার ধারণা মুম্বাই পুলিশও ব্যাপারটা নিয়ে নিশ্চিত নয়!"

কিন্তু যে ব্যক্তি মাত্র কয়েকমাস আগে প্রথম বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসেছে, সে এত সাবলীল হিন্দি কীভাবে বলতে পারে এবং মুম্বাইয়ের মতো শহরে একা একা এরকম একটি দুঃসাহসিক লুঠ ও হামলার পরিকল্পনা করতে পারে– তা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছিলেন মুম্বাইয়ের আর একজন পুরনো সাংবাদিক লতা দেশাই।

মুম্বাই পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী শরিফুল ইসলাম শহরের ওরলি এলাকার একটি পাবে ওয়েটারের কাজ নিয়েছিল। তবে সে কাজ না টেঁকায় স্থানীয় একজন ঠিকাদারের কাছে নিজের নাম আর টেলিফোন নম্বর রেখে শহরতলির থানে এলাকায় চলে যায়। পরে ওই ঠিকাদারের কাছে পাওয়া মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরেই তাকে পুলিশ ট্র্যাক করে থানের কাছে গভীর জঙ্গলে খুঁজে বের করে।

পুলিশের কাছে জেরায় সে না কি নিজেকে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের লোক বলে দাবি করেছিল। কিন্তু তার উত্তরে নানা অসঙ্গতি মেলায় ও ঠিকানাও ঠিকমতো বলতে না পারায় পুলিশের সন্দেহ বাড়ে এবং ক্রমশ ওই ব্যক্তি স্বীকার করে যে সে বাংলাদেশ থেকে এসেছে, এরকমটাই পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।

ঘটনার দিন (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৭টার সময় বান্দ্রা রেল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে তার ছবি ধরা পড়েছিল, সেটাও পুলিশকে শরিফুল ইসলামকে চিহ্নিত করতে সাহায্য করেছিল। বান্দ্রা স্টেশনে তাকে সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য মোবাইল ফোনে 'গুগল পে' দিয়ে পেমেন্ট করতেও দেখা যায় বলে পুলিশ সূত্রেই জানা গেছে।

কিন্তু 'গুগল পে'-র গ্রাহক হওয়ার জন্য ভারতের আধার বা ওই জাতীয় পরিচয়পত্রের দরকার হয়, একজন অবৈধ বাংলাদেশি তা কীভাবে পেল সেটাও স্পষ্ট নয়।

মুম্বাই পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়েছে, ধৃত ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো ভারতীয় প্রমাণপত্র মেলেনি। মুম্বাইয়ের একটি আদালতে (রবিবার) মহম্মদ শরিফুল ইসরাম শেহজাদকে পেশ করা হলে কোর্ট তার পাঁচ দিনের পুলিশি রিমান্ড মঞ্জুর করেছে।

সূত্র : <a class="link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2025/01/21/1471184">কালের কন্ঠ</a>

News Image
News Image
News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

Public Figures

Slide Left Slide Right
News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image

News Image